সফল সাক্ষাৎকারের কৌশল
প্রায় সব শিক্ষিত তরুণের কাছেই প্রধান
চাওয়া একটি ভালো চাকরি। ওই চাকরিকে ঘিরেই দেখে সে জীবনের বাকি সব স্বপ্ন।
আর বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই চাকরির জন্য একটি প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়। এর
অন্যতম অনুষঙ্গ সাক্ষাৎকার। সাক্ষাৎকার ভালো না হলে চাকরির সম্ভাবনা ক্ষীণ
হয়ে আসে।
দেখা যায় অনেক তরুণ চাকরির জন্য হন্যে হয়ে
ঘুরলেও সাক্ষাৎকারের বিষয়টিকে ততোটা গুরুত্ব দেয় না। প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির
অভাবে অধিকাংশ প্রতিযোগীই সাক্ষাৎকারে ভালো করতে পারে না। কোনো একটি
প্রতিষ্ঠানের চাকরির সাক্ষাৎকারে অনুত্তীর্ণ হওয়া কিন্তু তুচ্ছ বিষয় নয়।
সাধারণত একটি নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানে জীবনে
একবারই সাক্ষাৎকার দেওয়ার সুযোগ আসে। তাই সেটি কাজে লাগাতে না পারলে ওই
প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সুযোগ আর নাও হয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া অনুত্তীর্ণ হওয়ার
অর্থ শুধু তাৎক্ষণিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত হওয়া নয়, এটি পেশাগত জীবনের একটা
পরাজয়ও বটে। ভবিষ্যৎ জীবনে উক্ত প্রতিষ্ঠানে দ্বিতীয়বার সাক্ষাৎকার
প্রদানের সুযোগ আর নাও আসতে পারে। আর এলেও আগের সাক্ষাৎকারের দীনতায়
কর্তৃপক্ষের মধ্যে একটা নেতিবাচক ধারণা তৈরি হলে সফল হওয়ার সম্ভাবনা কম।
তাই যে কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরির সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রে আমাদেরকে অধিক মনোযোগী ও সমস্ত প্রচেষ্টা নিয়োজিত করা উচিত।
সাক্ষাৎকারে নিজেকে যোগ্য হিসেবে প্রমাণ
করার অনেক কৌশল রয়েছে। তবে ৪P(Preparation/প্রস্তুতি; Presentation/
উপস্থাপনা; Preception/ ধারণা ও Pounding /তাড়ন বা প্রহরণ) এর প্রয়োগ
এক্ষেত্রে সাফল্যের চাবিকাঠি হিসেবে বিবেচিত। আমার এ লেখায় আমি ৪P এর
অন্তর্নিহিত বিষয় যা সফল সাক্ষাৎকার প্রদানে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে সে
বিষয় আলোচনার চেষ্টা করেছি।
প্রস্তুতি: কার্যকর
প্রস্তুতি আত্মবিশ্বাসের চাবিকাঠি। এটি কিন্তু সাক্ষাৎকার গ্রহীতাকে
প্রভাবিত করে। গুছিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে পারলে ইমপ্রেসড করা যায়। এমনটি
হলে সাক্ষাৎকার গ্রহীতার কাছ থেকে সহায়তা পাওয়া যায়। তিনি বা তারা বিভিন্ন
ধরনের প্রশ্ন করেন। প্রার্থীকে অনেক সময় দেন। এতে নিজেকে প্রমাণ করার সুযোগ
পাওয়া যায়।
সাক্ষাৎকার গ্রহীতা কৌশলে কিছু বিষয় জেনে
নিতে চান। প্রায় সব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রেই এগুলো কমন। তাই বিষয়গুলো
সম্পর্কে ভেবেচিন্তে উত্তর সাজিয়ে রাখতে হবে। বিষয়গুলো হচ্ছে- (১)
জীবনবৃত্তান্তে উল্লেখ করা গুণাবলী, (২) প্রস্তাবিত চাকরির জন্য প্রয়োজনীয়
গুণাবলী, (৩) বর্তমানে কর্মরত প্রতিষ্ঠান এবং যে প্রতিষ্ঠানের জন্য
সাক্ষাৎকার সেগুলোর বিষয়ে স্বচ্ছ ধারণা, (৪) চাকরি পরিবর্তনের পেছনের কারণ
কি কি, (৫) বর্তমান প্রতিষ্ঠান ও বর্তমান চাকরি এবং প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠান ও
চাকরির মধ্যে যে তুলনামূলক সুবিধাবলী রয়েছে, (৬) ভালো বেতন বা
পারিশ্রমিকের আবেদনের পেছনে যে শক্ত যুক্তি রয়েছে, (৭) প্রতিযোগী
প্রার্থীদের মধ্যে নিজে কেনো সবচেয়ে উপযোগী তা প্রমাণ এবং (৮) সরকারি
নীতিসহ প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা সংশ্লিষ্ট জ্ঞান।
উপস্থাপনা: পণ্য বিক্রির
ক্ষেত্রে এর মোড়ক ক্রেতাকে উৎসাহিত বা তাড়িত করে। সাক্ষাৎকারের ক্ষেত্রেও
এটা প্রযোজ্য। উপস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাক্ষাৎকারের জন্য তাই
পরিষ্কার এবং উপযুক্ত পোশাক পরতে হবে। ভালো আচরণ, আকর্ষণীয় অভিব্যক্তি এবং
ইতিবাচক অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে আত্মবিশ্বাস ফুটিয়ে তুলতে হবে। কথা বলার সময়
শক্তিশালী আত্মবিশ্বাস এবং প্রস্তাবিত পদ সংশ্লিষ্ট জ্ঞানকে তুলে ধরা খুবই
জরুরি।
উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, একজন
ব্যবস্থাপক-অর্থ পদে প্রতিযোগীকে অবশ্যই প্রমাণ করতে হবে যে, তিনি কীভাবে
আগের প্রতিষ্ঠানে বাজেটারি নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার মাধ্যমে ব্যয় নিয়ন্ত্রণ ও
প্রতিষ্ঠানের দক্ষতা বাড়িয়েছেন। বর্তমান প্রতিষ্ঠানে তিনি কি মূল্য সংযোজন
করেছেন এবং তার অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান কীভাবে নতুন চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানকে আরও
উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নেবে- তা স্পষ্টভাবে ও আত্মবিশ্বাসের সাথে উপস্থাপন
করতে হবে।
প্রশ্নের জবাবে সম্ভাব্য চাকরিদাতা
প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ইতিবাচক, সঠিক ও একেবারে নতুন তথ্য প্রদান প্রতিযোগীকে
নিয়োগ তালিকার শুরুতে স্থান করে দেয়। প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট
কর্মচারী যথা পিয়ন ও অভ্যর্থনাকারীর সাথে অবশ্যই ভালো ব্যবহার করতে হবে এবং
প্রয়োজনে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে। প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট
কর্মচারীদের মধ্যে কোনো কারণে প্রার্থী সম্পর্কে নেতিবাচক ধারণা হলে তাও
চাকরি পেতে অন্তরায় সৃষ্টি করতে পারে।
আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, অনেক সময়
প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানের কাছে সম্ভাব্য ব্যবস্থাপক-অর্থ এর গুরুত্ব
বর্তমানে কর্মরত সহায়ক কর্মচারীদের চেয়ে অনেক কম।
ধারণা: সাক্ষাৎকারের আগে
সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের উঁচুস্তরের ব্যবস্থাপনার আচার-আচরণ, নির্দিষ্ট
পদের পরবর্তী ধাপগুলো এবং অগ্রগামিতা অবশ্যই জানতে হবে। সংশ্লিষ্ট
প্রতিষ্ঠানের কাছে নিজেকে যেমন তাদের জন্য অতীব প্রয়োজনীয় বলে প্রমাণ করতে
হবে, তেমনি প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানটি আপনার জন্য সামঞ্জস্যপূর্ণ কি না- তাও
ভেবে দেখতে হবে। প্রতিষ্ঠানটি আপনার জন্য সঠিক হয় কি না- তা প্রমাণের জন্য
কতগুলো প্রশ্নের একটি তালিকা নিয়োগকর্তাদের জিজ্ঞাসা করার নিমিত্তে তৈরি
করতে হবে। যেমন: তাদের কাজের পরিবেশ কেমন? সংশ্লিষ্ট পদের দায়িত্ব ও
কর্তব্য কী? উপরে ওঠার সম্ভাবনা ও প্রয়োজনীয় সময় কত? ইত্যাদি প্রশ্ন
চাকরিটি সঠিক হবে কি না- তা নির্ধারণে সহায়তা করতে পারে। নিয়োগকর্তা অনেক
সময় সাক্ষাৎকারকালীন প্রতিশ্রুতি পালন করেন না বা গড়িমসি করেন, তাই
প্রতিশ্রুতিগুলো যাতে নিয়োগপত্রে স্থান পায় সে ব্যাপারে তাদেরকে উৎসাহিত
করতে হবে। প্রস্তাবিত প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরীণ তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিশ্রুতি
লিপিবদ্ধের ক্ষেত্রে প্রতিযোগীকে সাবধানতার পরিচয় দিতে হবে এবং যার যার
নিজস্ব মেধাকে কাজে লাগাতে হবে।
তাড়ন/প্রহরণ: ভেবে দেখুন
যদি আমাকে জিততে হয় তবে অন্যদেরকে অবশ্যই হারতে হবে বা হারাতে হবে।
সাধারণত প্রতিযোগী তার সব প্রচেষ্টাই নিয়োজিত করে জয়ী হওয়ার জন্য। তাড়ন বা
প্রহরণ কৌশল অবলম্বনকারীকে অন্যান্য প্রতিযোগীর মধ্যে তার গ্রহণযোগ্যতাকে
নিয়োগকর্তার কাছে অধিক আকর্ষণীয় করে তোলে, যদিও তিনি সক্ষাৎকারে তার গড়
যোগ্যতাও প্রমাণ করতে পারেন। এটা আসলে বিরল বা অতিসাম্প্রতিক তথ্য যা
জিজ্ঞাসিত প্রশ্নের জবাবে কোনো প্রতিযোগী কর্তৃক প্রদান করা ব্যতীত আর
কিছুই নয়। যা অনেক সময়ই সাধারণ প্রার্থীদের কাছে এবং সাক্ষাৎকার গ্রহণকারীর
কাছে অপরিচিত। যখন সাক্ষাৎকার গ্রহণকারী এ ধরনের তথ্য পান, তখন তারা এটা
পরবর্তী প্রার্থীদেরকে একে একে জিজ্ঞেস করেন। কিন্তু এদের বেশিরভাগেরই ওই
বিষয়গুলো জানা থাকে না বলে তারা সঠিক উত্তর দিতে পারেন না। এভাবে প্রহরণ
কৌশল চাকরি পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে।